ইন্ট্রাডে ট্রেডিং কথাটি শোনামাত্র ক্রিকেট ক্রিকেট একটি ব্যাপার চলে আসে । আগে ক্রিকেট খেলায় ৫০ ওভারের খেলা হত । ওই সময় সবার আগ্রহ কিংবা সময় থাকতনা । এখন টোয়েণ্টি টোয়েণ্টি ম্যাচ । একপক্ষে ভারত অন্যদিকে বাংলাদেশ । যত কম ওভার তত বেশি উত্তেজনা । দুইদেশের লোকেদের মধ্যে উত্তেজনা ও আগ্রহ চরম , ঠিক তেমনি সুইং ট্রেডিং , লংটার্ম ট্রেডিং থেকে ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের আগ্রহ যেমন বেশি তেমনি জনপ্রিয় একটি ট্রেডিং পদ্ধতি ।
টোয়েণ্টি টোয়েণ্টি ম্যাচে যেমন রিস্ক ঠিক তেমনি অনেক রান করার সুযোগ । টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচে সফল হওয়ার জন্য ব্যাটসম্যানরা প্রচুর প্র্যাকটিস করেন , ঠিক তেমন ভাবেই ইন্ট্রাডে ট্রেডিং কাজ করে ।
ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে সফল হতে হলে আপনাকে অনুশীলন করা প্রয়োজন তাও আবার সঠিক পদ্ধতিতে । একটি ক্রিক্রেট ম্যাচে খেলোয়াড়দের যেমন শরীরচর্চা ও মনের চর্চার জন্য ব্যায়ামের প্রয়োজন ঠিক তেমনি ইন্ট্রাডে ট্রেডিং একপ্রকার খেলা । শরীর ও মন সুস্হ সবল থাকলেই এই খেলায় সফল ব্যাটসম্যান হয়ে উঠবেন ।আসুন জেনে নেওয়া যাক ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের খুঁটিনাটি ।
Table of Contents
কী এই ইন্ট্রাডে ট্রেডিং ?
ইন্ট্রাডে ট্রেডিং কোন লগ্নি নয় । ইন্ট্রাডে ট্রেডিং ডে ট্রেডিং নামেও পরিচিত ।
ইন্ট্রাডে ট্রেডিং হল একটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে কেনাবেচার পদ্ধতি ।
ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের উদ্দেশ্য হল চট করে কিনে দাম একটু উপরে গেলে বেচে দেওয়া । ধরুন আপনি দুপুর ১২ টায় HDFC LIFE INURENCE এর ১০০ টা শেয়ার ৬৮০ টাকা করে কিনেছেন , দুপুর ১ঃ৩০ দেখলেন দাম ৬৯৩ টাকা হয়ে গেছে । তাহলে আপনি শেয়ার প্রতি ১৩ টাকা করে লাভ করলেন অর্থাৎ ১০০ শেয়ারে ১০০ x ১৩ =১৩০০ টাকা একটি ট্রেডে লাভ করলেন। এখন থেকে ২০০ টাকা করে ব্রোকারকে দিলেও ১১০০ টাকা আপনার থাকবে ।
ইন্ট্রাডে ট্রেডিং কী ভাবে শুরু করা যাবে ?
ইন্ট্রাডে ট্রেডিং শুরু করার পূর্বে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে আপনকে জেনে নেওয়া উচিত । বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধরনা থাকলে আপনিও এই খেলায় সফল ব্যাটসম্যান হয়ে উঠবেন ।ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল –
i) আপনাকে ব্রোকারের কাছে ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে ।
ii) ডে ট্রেডিং করতে হলে আপনাকে একটি মার্জিন মানি দিতে হবে । মানে অগ্রিম টাকা রাখতে হবে ব্রোকারের কাছে । যেরকম টাকা দেবেন তার অমুকগুন ব্রোকার আপনাকে ট্রেড করতে দেবে । ধরুন আপনি ১০,০০০ টাকা জমা রেখেছেন ব্রোকার আপনাকে যদি ৫ গুন ট্রেড করতে দেয় তাহলে আপনি ১০,০০০ x ৫ =৫০,০০০ টাকা ট্রেডিং করতে পারবেন ।
iii) আপনি যে মার্জিন টাকা দেবেন , আপনার লস করার অধিকার সেই মার্জিনের টাকা অবধি ।
iv) ট্রেডিং করতে গিয়ে লাভ হলে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা এসে যাবে , লস হলে আপনাকে টাকা দিতে হবে ।
v) আপনি যদি টাকা দিতে অক্ষম হন , ব্রোকার আপনার বিরুধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে ।
কীভাবে ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে স্টক নির্বাচন করবেন ?
ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে স্টক নির্বাচনে কোন নির্দিষ্ট পন্থা নেই যা অবলম্বনে প্রত্যেকেই সফলতা পাবে । ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে স্টক নির্বাচনে একাধিক বিষয় ফ্যাক্টর করে তার মধ্যে কিছু বিষয় আজ আলোচনা করা হবে । তাহলে আসুন জেনে নেই ইন্ট্রাডে ট্রেডিং করবার সময় কোন কোন বিষয়ের উপর গুরত্ব দেওয়া উচিত ।
i) HIGH BETA , HIGH VOLATALITY , NARROW RANGE স্টকগুলো নির্বাচন করুন ।
ii) এই স্টকগুলোকে একটি এক্সেল শিটে এন্ট্রি করুন । এর মধ্যে থেকে কমন স্টক গুলোকে কিংবা দুটো কমন রয়েছে এমন স্টক নির্বাচন করুন ।
iii) টেকনিক্যাল সেটঅ্যাপ হিসাবে দেখতে পারেন Heikin Ashi + stochestic RSI , Bollinger Band , এই দুটো সেটআপ দেখবেন ১৫ মিনিটের চার্টে ।
iv) আপনি যে স্টকগুলো নির্বাচন করেছেন , সেই সেক্টরগুলোর দিশা কোনদিকে তা নজরে রাখুন। স্টকের দিশা এবং সেক্টরের দিশা একইদিকে থাকলে তা নিরাপদ ট্রেড ।
v) স্টকের দিশা চিহ্নিত করার জন্য আরেকটি ফলপ্রসূ দিক হল Future & option দেখা ।
vi) Expontential Moving Average ৫-৮-১৩ এই তিনটি লাইন ১৫ মিনিটের চ্যাটে দেখুন ।
vii) Breakout কোন দিকে হবে তা জানার জন্য Henkinshi & stochestic RSI ব্যাবহার করে জানতে পারবেন।
ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে স্টক নির্বাচনে সামান্য কিছুই পদ্ধতি সম্পর্কে খুবই সংক্ষেপে আলোচনা করা হল । এই টেকনিক্যাল সেটঅ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানাবেন ।
আরো পড়ুন Scalping trading কী ?
ডে ট্রেডিং থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো কী ?
i) কোন রকম মার্কেট গুরু কিংবা এক্সপার্টের কথা না শুনে নিজের অ্যানালাসিসের উপর ভরসা করুন ।
ii) সময় গুরত্বপূর্ণ নয় , গুরত্বপূর্ণ হল সঠিক সুযোগ । সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করুন ।
iii) অল্প সংখ্যক লাভজনক ট্রেড করুন ।
iv) বাজার শুরু হওয়ার আগে Homework করে নিন ।
v) একজন ট্রেডার হিসাবে Ego & Emotion দূরে রাখুন ।
vi)একজন ট্রেডার হিসাবে লাভ , লোকসান আগেই ঠিক করে নিন ।
vii) স্টকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেননা । আপনি মাথায় রাখবেন আপনি ট্রেড করেছেন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট লাভের উদেশ্যে , সেটা হয়ে গেলে বেরিয়ে পড়ুন ।
আর পড়ুন শেয়ার বাজারে 7 টি বৃহত্তম ভুল যা সহজে আপনি এড়াতে পারবেন
ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ে লোকসান থেকে নিজেকে রক্ষা করার করনীয় কী ?
ডে ট্রেডিং করার জন্য টেকনিক্যাল অ্যানালাসিস খুবই গুরত্বপূর্ণ । টেকনিক্যাল অ্যানালাসিস দ্বারা স্টকের আগাম প্রাইস মুভমেন্ট জানা যায় ।কোন অ্যানালাইসিস ভুল হয় না , ভুল হয় নিজেদের অ্যানালাইসিসের conclusion । নিচে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো অ্নুসরন করলে আপনি আপনার ভ্রান্তিগুলো ক্রমশ কমিয়ে আনতে পারবেন ।
i) ডে ট্রেডিং করার জন্য প্রথমে আপনাকে ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে হবে ।আপনি ট্রেন্ড চিহ্নিত করার জন্য volume , delivery % , fibonacci সাহায্য নিতে পারেন ।
ii)ইন্ট্রাডে ট্রেডিং ম্যানুয়াল করে থাকলে ২-৩ টির বেশি ট্রেড একদিনে করা উচিত নয় ।
iii) মার্কেট শুরু হওয়ার আগেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে কেমন করে ট্রেড করবেন । আপনি অ্যানালাইসিস করে যেসব স্টক নির্বাচন করেছেন , মার্কেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে দেখুন সেই আনুযায়ী মুভেমেন্ট করছে কিনা । যদি না করে থাকে তাহলে সেই ট্রেড ছেড়ে দিতে হবে ।কারন এমন হতে পারে স্টকের মধ্যে অন্য কিছু চলছে কিন্ত আপনার কাছে খবর নেই ।
iv) আপনি ট্রেড করার জন্য যেসব স্টক নির্বাচন করেছেন , সেই সব স্টকের নিউজ ট্র্যাকে রাখবেন ।
v) রেজাল্ট এবং নিউজ ব্যাসিসে কোন স্টক নির্বাচন করা উচিত নয় । .
vi) লস হলে সেদিন ট্রেড থেকে দূরেই থাকুন ।
ডে ট্রেডিংয়ের সুবিধা
i) স্টকের প্রাইসের মুভমেন্ট ওপর নির্ভর করে ট্রেডাররা প্রোফিট বুক করে ।
ii) ট্রেডাররা ডেলিভারি চার্জ avoid করতে পারে ।
iii) যদি ট্রেডাররা তাদের তাদের ট্রেড বন্ধ না করে তাহলে দিনের মধ্যেই নিজে নিজেই ট্রেড বন্ধ হয়ে যায় ।
iv) প্রফিট করার অনেক সুযোগ রয়েছে ।
ডে ট্রেডিংয়ের অসুবিধা
i) রিস্ক তুলনামুলকভাবে বেশি ।
ii) মানসিক চাপ খুব বেশি থাকে ।
iii)প্রতিদিন অর্থ উপাজন করবেন এমন নিশ্চয়তা নেই ।
ডে ট্রেডিং- সম্পর্কিত প্রশ্নত্তর
১)ডে ট্রেডিং এবং ডেলিভারি ট্রেডিংয়ের মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর ডে ট্রেডিং এবং ডেলিভারি ট্রেডিংয়ের মধ্যে মুল পার্থক্য হল সময়ের । ডে ট্রেডিং একদিনেই সম্পূর্ণ হয় কিন্ত ডেলিভারি ট্রেডিং একের অধিক দিনের জন্যে থাকে ।
২) ডে ট্রেডিংয়ে সবচেয়ে ভালো ট্রেডিং সেটআপ কি ?
উত্তর সার্বজনীন কোন সেটআপ নেই, একাধিক সেটআপ রয়েছে তার মধ্যে আপনার যেটায় লাভ হয় সেটাই আপনার জন্য ভালো । আজকের ব্লগে একাধিক সেটআপ সম্পর্কে আলোচনা করেছি ।
৩)ডে ট্রেডিংয়ে স্টপ লস কেন প্রয়োজন হয় ?
উত্তর ডে ট্রেডিংয়ে স্টপ লস আনলিমিটেড । আপনি যদি আগে থেকে কতটা টাকা লস করতে পারবেন তা ঠিক না করেন তাহলে আপনার সমস্ত অর্থ একদিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে ।
৪) ডে ট্রেডিংয়ে কিভাবে স্টক পছন্দ করবেন ?
উত্তর আজকের ব্লগে বিস্তারিত করে আলোচনা করা হয়েছে ।
৫) ডে ট্রেডিংয়ে শুরু করার জন্য কত টাকার প্রয়োজন ?
উত্তর আপনি ৫০০০ টাকা থেকেও শুরু করতে পারবেন । আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যত টাকা বিনিয়োগ করবেন সেটা লস হলেও আপনার ওপর প্রভাব পরবে না ।
সতর্কীকরণঃ আজকের ব্লগে যে সমস্ত উদাহরন ব্যাবহার করা হয়েছে কেবলমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য এবং পাঠকের তথ্যের জন্য ।বিনিয়োগ সম্পর্কিত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দয়া করে আপনার আর্থিক উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করুন ।
Hi, I’m Pritam Saha. I have a passion for stocks and have spent my last 6+ years learning about the stock market. My Blog focuses on idea & concepts that improve the skills of the investor to manage their own money.