জীবনের জন্য যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ তা ছোট বাচ্চারা কখনই এমনিতেই শিখে ফেলবে এমন নয়। যা কিছুই আপনি সন্তানের শেখার জন্য প্রয়োজনীয় মনে করছেন তা কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে শেখাতে হবে। তেমনই একটি পাঠ হল ফিনান্সিয়াল লিটারেসি বা আর্থিক সাক্ষরতা। বর্তমানে কিশোর কিশোরীদের স্বাবলম্বী হয়ে বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় আগ্রহী হতে দেখা যাচ্ছে। ফলত আর্থিক সাক্ষরতা জীবনের একটি অপরিহার্য দিক হয়ে উঠছে।
আর্থিক সাক্ষরতা বলতে আসলে কি বোঝায়?
এককথায় অর্থ পরিচলনা করার ক্ষমতাকেই আর্থিক সাক্ষরতা বলা হয়। আপনি যদি সন্তানকে আর্থিক সাক্ষরতা শেখাতে চান তাহলে কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে? অর্থ খরচ, সঞ্চয়ের পাশাপাশি ধার দেওয়া বা নেওয়ার হিসেব এবং বিনিয়োগের ধারণা আপনার শিশুকে শেখাতে ভুলবেন না। এছাড়া আপনার পরিবারের মাসিক এবং দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনা সম্পর্কে একটু একটু করে শিশুকে ধারণা দিতে শুরু করতে পারেন।মাসিক বাজেট থেকে শুরু করে প্রতিদিনের জিনিসপত্র কেনাকাটার হিসেব এবং ট্যাক্স পেমেন্টের মত ব্যাপারে জ্ঞান কমবেশি সকলেরই থাকা প্রয়োজন।
কেন প্রয়োজন আর্থিক সাক্ষরতার?
ছোট বাচ্চাদের আর্থিক সাক্ষরতা শেখানোর কি আদৌ প্রয়োজন আছে? হ্যাঁ আছে। খুব ছোট বয়স থেকে শিশুদের যদি আর্থিক সাক্ষরতা শেখানো যায় তাহলে তার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছেঃ
- আর্থিক সাক্ষরতা সন্তানকে অর্থের মূল্য বোঝাতে সাহায্য করে। অর্থের মূল্য বুঝতে পারলে দেখবেন আপনার শিশু আর আগের মত এটা সেটা কিনে দেওয়ার জন্য বায়না করছে না। অনেক বাবা মায়েরাই শিশুর সামনে টাকা পয়সা বা জিনিসের মূল্য সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলেন। এমনটা না করে বরং শিশুর সামনে জিনিসের মূল্য নিয়ে কথা বলুন। এতে করে শিশুর মধ্যে বোঝার ক্ষমতা তৈরি হবে আসলে কোন জিনিস অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং কোনটি সহজ ভাবে পাওয়া যায়।
- শিশু যখন প্রকৃতই অর্থের মূল্য বুঝতে পারে তখন তারা কোন উপহার বা অপ্রত্যাশিত কিছু পেলে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ থাকে।
- আর্থিক সাক্ষরতা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করা শিশুর মধ্যে তৈরি করতে পারে। আগামী জীবনে প্রয়োজনীয় আর্থিক পরিকল্পনার জন্য ভিত্তি প্রস্তুত করার জন্য শিশুকে আর্থিকভাবে সাক্ষর করে তুলুন।
- যে কোন অভিভাবকই চান তার সন্তান যেন ভবিষ্যতে সুখী এবং চাপমুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। সন্তানের জীবনে এই দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে চাইলে আর্থিক সাক্ষরতার কথা আপনাকে বিবেচনা করতেই হবে।
আরো পড়ুন আপনার সন্তানের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছেন। দেখে নিন 5টি বিনিয়োগ পরিকল্পনা
কিভাবে শেখাবেন আর্থিক সাক্ষরতা পাঠ?
- শিশুকে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা বোঝান
বাচ্চাদের পছন্দের কোন জিনিস কেনার জন্য টাকা জমিয়ে কেনার ব্যাপারে উৎসাহ দিন। মাঝে মধ্যে তাকে ভালো কোন কাজের জন্য অল্প কিছু অর্থ পুরষ্কার হিসেবে দিন এবং সঞ্চয় করে রাখতে বলুন। কিছু চাইলেই তা হাতের কাছে এনে উপস্থিত করবেন না। তার কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমলে তা দিয়ে পছন্দের জিনিস কিনে দিন। এর পাশাপাশি তাকে শেখাতে পারেন যে, যে কোন সময় টাকা চেয়ে নেওয়া বা ঋণ আসলে একটি খারাপ ধারণা।
- বাচ্চাদেরও উপার্জনের সঙ্গে পরিচিত করান
অর্থ যে একটি সীমিত সম্পদ এটি বয়স নির্বিশেষে সকলের জানা প্রয়োজন। বাচ্চারা যখন উপার্জনের ধারনার সঙ্গে পরিচিত হবে তখন তারা এটি আরো ভালো বুঝতে পারবে। আপনি সন্তানকে সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে পকেট মানি দিতে পারেন অথবা বাগান পরিচর্যার মত সহজ কাজে আপনাকে সহায়তা করার জন্য তাকে পারিশ্রমিক দিতে পারেন। তাকে বুঝিয়ে দিন যে যা কিছু প্রয়োজনীয় ব্যয়, এই সীমিত অর্থের মধ্যেই তাকে করতে হবে। এতে করে আপনার সন্তানের মধ্যে বাজেট করে অর্থ ব্যয় করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- সন্তানকে ব্যয়ের হিসাব রাখা শেখান
একজন ভালো সঞ্চয়কারী সবসময় হিসাব রাখেন ঠিক কোন খাতে তার কত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। খরচের হিসাব রাখা যে গুরুত্বপূর্ণ তা সন্তানকে শেখান। বাচ্চার সামনে একটি আর্থিক সঞ্চয়ের লক্ষ ঠিক করে দিন। কোথায় তাদের অর্থ খরচ হচ্ছে তার একটি সাপ্তাহিক হিসাব রাখা এবং মাসিক হিসাব নির্ণয় করা শেখাবেন। এখন এই হিসাব থেকে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন কিভাবে তাদের ব্যয়ের অভ্যাস পরিবর্তন করলে সহজেই সে আর্থিক লক্ষে পৌঁছতে পারবে।
- দৈনন্দিন আয় ব্যয়ের সঙ্গে শিশুকে যুক্ত করুন
মোটামুটি পাঁচ ছয় বছর বয়স হলে শিশুর যখন যোগ বিয়োগের স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে গেছে তখন থেকে তাকে একটু একটু করে দৈনন্দিন আয় ব্যয়ের ব্যাপারে যুক্ত করুন। যেমন ধরুন আপনি মাসকাবাড়ির ফর্দ তৈরি করছেন এসময় তাকে ছোটখাটো যোগ বিয়োগের কাজ দিন, কত টাকা থেকে কত খরচ হচ্ছে, কত টাকা পড়ে থাকলো এসব তাকে হিসাব করতে দিন।
যে কোন বাবা মায়েরাই চান তাদের সন্তানকে উত্তরাধিকার সূত্রে একটি সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ প্রদান করতে। অর্থ যে কোন মানুষের জীবনেরই একটি অপরিহার্য অংশ। আর্থিক জীবনের শালীনতা রাখা, অর্থের সামঞ্জস্য বজায় রাখা, ব্যক্তিগত অর্থের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলিও কিন্তু শিশুকে শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরন দিয়ে বোঝানোর উপর জোর দিন। জীবনের বড় আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে শিশু যাতে পরবর্তিতে সক্ষম হয় সেজন্য তাকে মৌলিক আর্থিক ধারণাগুলির সঙ্গে পরিচিত করান। আপনি যদি চান সন্তানের জীবনে সমৃদ্ধি আসুক তাহলে বাচ্চার আর্থিক সাক্ষরতা আজই শুরু করুন।
আরো পড়ুন:-
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস শেখার সহজ উপায়
কোম্পানির অ্যানুয়াল রিপোর্ট কিভাবে পড়তে হয়
সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড কিভাবে বাছাই করবেন
Hi, I’m Pritam Saha. I have a passion for stocks and have spent my last 6+ years learning about the stock market. My Blog focuses on idea & concepts that improve the skills of the investor to manage their own money.
Pingback: এমন কয়েকটি ভুল যা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে অভিভাবকেরাই করে ফেলছেন।Parenting tips - Parenting