প্রাইমারি মার্কেট হল বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ের জন্য প্রথম সিকিউরিটিজ তৈরি করা হয় ।এই প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারী সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয়ের সুযোগ পায় ।এই বাজারে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নতুন সিকিউরিটজ ইস্যু করা হয় ,যা সরকার ও কোম্পানি গুলোকে মূলধন বাড়াতে সাহায্য করে । আসুন তাহলে জেনে নেই প্রাইমারি মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-
Table of Contents
প্রাইমারি মার্কেট কাকে বলে ?
প্রাইমারি মার্কেট নতুন ইস্যু বাজার হিসাবেও পরিচিত । এটি প্রথমবার জারি করা সিকিউরিটিজের সাথেও সম্পর্কিত ।এই বাজারে পুরো লেনদেনের প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য তিনজন জড়িত থাকে । তাঁরা হলেন একটি কোম্পানি, বিনিয়োগকারী এবং একজন আন্ডাররাইটার অন্তর্ভক্ত থাকবে ।একটি কোম্পানি প্রাথমিক বাজারে একটি আইপিও হিসাবে সিকিউরিটিজ ইস্যু করে এবং এই ধরনের নতুন ইস্যুটির বিক্রয়মুল্য একটি সংশ্লিষ্ট আন্ডাররাইটার দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে পারে বা নাও হতে পারে । একজন আন্ডাররাইটার নতুন ইস্যু অফারটি সহজতর করে এবং নিরীক্ষণ করে । বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক মার্কেটে নতুন জারি করা সিকিউরিটিজ ক্রয় করে । এই ধরনের বাজার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
বাজার থেকে তোলা অর্থ নতুন প্রকল্প শুরু , ব্যাবসার প্রসারন, বিদ্যমান প্রকল্পগুলির আধুনিকীকরণ, একত্রীকরণ এবং টেকওভার ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।জারি করা সিকিউরিটিজের প্রাথমিক বাজার (Primary market) উদাহরণের মধ্য রয়েছে নোট বিল, সরকারি বন্ড , কর্পোরেট বন্ডের পাশাপাশি কোম্পানির স্টক ।
ওপেন ফ্রি ডিম্যাট আকাউন্ট – https://angel-one.onelink.me/Wjgr/139ovqs0
প্রাইমারি মার্কেটের কার্যাবলী
New issue offer
প্রাইমারি মার্কেট একটি নতুন ইস্যু অফার আয়োজন করে যা আগে অন্য কোন এক্সচেঞ্জে ট্রেড করা হয়নি । এই কারনে এটিকে একটি নতুন ইস্যু বাজারও বলা হয় ।
একটি নতুন অফারে বেশ কয়েকটি ধাপের প্রয়োজন । এটি একটি প্রকল্পের কার্যকারিতার একটি বিশদ মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত করে এবং এই উদেশ্যে আর্থিক ব্যাবস্থাগুলির মধ্য প্রমোটারের ঋণ ইক্যুইটি অনুপাত, লিকিউডিটি অনুপাত, ইক্যুইটি অনুপাত ইত্যাদি বিবেচনা করা অন্তর্ভুক্ত ।
Underwriting Service
একটি নতুন ইস্যু অফার করার সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন দিকগুলির মধ্য একটি হল আন্ডাররাইটিং । প্রাথমিক বাজারে একজন আন্ডাররাইটারের ভুমিকা হল অবিক্রিত শেয়ার ক্রয় করা ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায়শই আন্ডাররাইটার হিসাবে কাজ করে , প্রক্রিয়াটিতে কমিশন উপার্জন করে । প্রায়শই বিনিয়োগকারীরা আন্ডাররাইটারদের উপর নির্ভর করে, তা নির্ধারন করতে যে ঝুঁকিটি পুরষ্কারের যোগ্য কিনা ।
এটাও সম্ভব যে আন্ডাররাইটার সম্পূর্ণ আইপিও ইস্যু ক্রয় করে এবং তারপর বিনিয়গকারীদের কাছে বিক্রয় করবে ।
Distribution of new issue
এটি প্রাথমিক বাজারের আরেকটি গুরত্বপূর্ন কাজ । একটি নতুন প্রসপেক্টাস ইস্যু দিয়ে শুরু করা হয় ।
সাধারন জনগনকে নতুন ইস্যু কেনার জন্য আমন্ত্রন জানান হয় এবং কোম্পানি, ইস্যু সেইসাথে আন্ডারাইটার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয় ।
প্রাইমারি মার্কেটে ইস্যু করার প্রকার
সিকিউরিটিজ ইস্যু করার পর বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন উপায়ে এই ধরনের সিকিউরিটিজ ক্রয় করতে পারেন। প্রাইমারি মার্কেটে ইস্যু পাঁচ প্রকার –
Public Issue
পাবলিক ইস্যু হল একটি কোম্পানির সিকিউরিটিজ ইস্যু করার সবচেয়ে সাধারন পদ্ধতি । এটি মুলত আইপিও র মাধ্যমে করা হয় , যার ফলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে । এই সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয় ।
একটি প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর হয় , যখন তাদের শেয়ার আইপিও দ্বারা জনসাধারণের কাছে অফার করা হয় । এই ধরনের পাবলিক অফার একটি কোম্পানিকে ব্যবসার সম্প্রসারন , অবকাঠামোর উন্নতি এবং অন্যান্যদের মধ্য তার ঋণ পরিশোধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে দেয় । একটি খোলা বাজারে লেনদেন একটি কোম্পানির তারল্য(liquidity) বাড়ায় এবং ব্যবসার জন্য আরোও মূলধন বাড়াতে আরও শেয়ার ইস্যু করার সুযোগ দেয়
সেবি হল নিয়ন্ত্রক সংস্থা যা আইপিও নিরীক্ষণ করে । সেবির নির্দেশিকা অনুসারে, একটি কোম্পানি আইপিও ইস্যু করার সময় যে সমস্ত তথ্য দেয় তার তদন্ত করা হয় এবং কোম্পানিকে একটি পাবলিক ইস্যুর জন্য প্রস্পেক্টাসে তার প্রয়োজনীয় বিবরণ উল্লেখ করতে হবে ।
Private Placement
যখন একটি কোম্পানি তার সিকিউরিটিজ বিনিয়গকারীদের একটি ছোট গোষ্ঠীকে অফার করে, তখন আকে প্রাইভেট প্রেসমেন্ট বলা হয় । এই ধরনের সিকিউরিটিজগুলি হল বন্ড, স্টক বা অন্যান্য সিকিউরিটিজ হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উভয়ই হতে পারে ।
প্রাইভেট প্লেসমেন্টগুলি প্রাথমিক পাবলিক অফারগুলির তুলনায় ইস্যু করা সহজ কারন নিয়ন্ত্রক শর্তাবলি উল্লেখযোগ্যভাবে কম । এটি কম খরচ ও কম সময় বহন করে এবং কোম্পানিটি ব্যক্তিগত থাকতে পারে । এই ধরনের ইস্যু স্টার্ট আপ বা কোম্পানিগুলোর জন্য উপযুক্ত যা তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । কোম্পানি তার ইস্যু দ্বারা তহবিল সংগ্রহ বিনিয়োগ ব্যাংক বা হেজ ফান্ড থেকে করতে পারে বা মূলধন বাড়াতে অতি উচ্চ সম্পদের ব্যক্তিদের (HNIs) সামনে রাখতে পারে ।
Preferential issue
অগ্রধিকারমুলক ইস্যু হল মূলধন সংগ্রহের জন্য কোম্পানিগুলির কাছে উপলব্ধ দ্রুততম পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি । তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় উভয় কোম্পানিই বিনিয়োগকারীদের একটি নির্বাচিত গ্রুপকে শেয়ার বা পরিবর্তনযোগ্য সিকিউরিটিজ ইস্যু করতে পারে । অগ্রধিকার শেয়ারের দখলে থাকা শেয়ারহোল্ডাররা সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ প্রদানের আগে লভ্যাংশ গ্রহণ করে ।
Qualified institutional placement
QIP হওয়ার জন্য সেবি দ্বারা নথিভুক্ত হতে হয় । কোম্পানি যখন QIP দ্বারা অর্থ সংগ্রহ করে তখন সেটি খুব দ্রুত হয় এবং শর্তাবলী অনেক কম থাকে।
কিউআইবি হল প্রাথমিকভাবে এমন বিনিয়োগকারী যাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক জ্ঞান এবং দক্ষতা রয়েছে । কিছু কিউআইবি-
- Foreign institutional investors registered with the securities exchange board of india
- Foreign venture capital investors
- Alternative investment funds
- Mutual funds
- Public financial Institutions
- insurers
- Scheduled commercial banks
- pension funds
Rights and bonus issues
প্রাইমারি মার্কেটে আরেকটি ইস্যু হল রাইটস এবং বোনাস ইস্যু, যেখানে কোম্পানি বিদ্যমান বিনিয়গকারীদেরকে পূর্ব নির্ধারিত মুল্যে আরও বেশি সিকিউরিটি ইস্যু ক্রয় করার প্রস্তাব দিয়ে সিকিউরিটিজ ইস্যু করে বা অতিরিক্ত ফ্রি শেয়ার বরাদ্দের সুবিধা প্রদান করে ।Rights and bonus issues জন্য বিনিয়গকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য ডিসকাউন্ট মুল্যে স্টক কেনার পছন্দ বজায় রাখে ।রাইট ইস্যু কোম্পানির বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ন্ত্রন বাড়ায় এবং এই ধরনের শেয়ার ইস্যু করার ক্ষেত্রে কোন খরচ নেই।বোনাস ইস্যুগুলির জন্য , স্টকগুলি একটি কোম্পানি তার বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের অফার হিসাবে জারি করে । বোনাস শেয়ার ইস্যু করলে নতুন কোন মূলধন যোগায় না ।
Example of Major Shares sold in the primary market
অতীতে বেশ কয়েকটি নামকরা কোম্পানি তহবিল সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক বাজারে আইপিও নিয়ে এসেছিল ।
উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুক ২০১২ সালে একটি আইপিও নিয়ে আসে যা প্রযুক্তি দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় ছিল ।আইপিও এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে ।
ভারতে কোল ইন্ডিয়া ২০১০ সালে ১৫,০০০ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করে সবচেয়ে বড় আইপিও এর মধ্য একটি ছিল ।উল্লেখ্য যে কোম্পানিটি খুচরো বিনিয়গকারী , কর্মচারীদের জন্য চুড়ান্ত মুল্যে ৫% ছাড় দিয়েছে ।
ভারত সরকার LIC এর আইপিও নিয়ে বাজারে এসেছিল যা ভারতে স্টক মার্কেটের সবচেয়ে বড় আইপিও ।
Advantage of Primary Market
- প্রাইমারি মার্কেটে তহবিল সংগ্রহ করতে তুলনামূলক কম খরচ হয় এবং উচ্চ লিকিউডিটি থাকে ।
- প্রাইমারি মার্কেটে ঝুঁকি তুলনামুলক কম থাকে ।
- প্রাইমারি মার্কেটে যেহেতু সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ার কেনা হয় সুতরাং ব্রোকার চার্জ সহ অনেক চার্জ দিতে হয়না ।
- প্রাইমারি মার্কেটে নতুন উদ্যগকারীদের জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি সুযোগ করে দেয় ।
- প্রাইমারি মার্কেটে বাজারের ওঠানামা থাকে না ।
Disadvantage of primary market
- প্রতিটি স্টকের কিছু রিস্ক থাকে কিন্ত আইপিও এর ক্ষেত্রে এটা বোঝা একটু জটিল কারন এখানে কোন পুরনো তথ্য থাকে না ।
- ছোট বিনিয়োগকারীরা সবসময় এটি থেকে উপকৃত নাও হতে পারে । একটি শেয়ার অতিরিক্ত সাবস্ক্রাইব করা হলে ছোট বিনিয়গকারীরা বরাদ্দ নাও পেতে পারে ।
- আইপিওতে বিনিয়োগ করার আগে প্রায়ই বিনিয়গকারীদের কাছে সীমিত তথ্য থাকে । এর কারন হল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি সেবির প্রবিধানের আওতার বাইরে ।
আপনি যখন স্টকগুলিতে বিনিয়োগ করবেন তখন প্রাথমিক বাজারের দিকেও নজর রাখুন। কারন আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের বড় রিটার্ন দেওয়ার সম্ভবনা থাকতে পারে ।
আরো পড়ুনঃ-
Hi, I’m Pritam Saha. I have a passion for stocks and have spent my last 6+ years learning about the stock market. My Blog focuses on idea & concepts that improve the skills of the investor to manage their own money.
Pingback: মহিলা সন্মান সেভিংস সার্টিফিকেট ২০২৩ - Share Bazar Blog
Pingback: শেয়ার কত প্রকার ও কি কি ? - Share Bazar Blog