কোন একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাফ্যলের পেছনে রয়েছে সেই সংস্থার পরিচালকেরা। কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড হল সেই সংস্থার কর্মচারীরা কারন তাদের অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমে যেকোন ব্যবসার বৃদ্ধিতে গুরত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে । অনেক কোম্পানি তাদের কর্মচারীদের প্রশংসা করে এবং তাদের বিভিন্ন উপায়ে পুরস্কৃত করে । পুরস্কৃত কর্মীদের ব্যাবসার বৃদ্ধিতে আরও অবদান রাখতে অনুপ্রানিত করে । সোয়েট ইক্যুইটি হল এমন একটি পুরষ্কার যা কোম্পানিগুলি তাদের কর্মীদের অফার করে । সোয়েট ইক্যুইটি কি তা নিয়ে আজকের ব্লগে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল –
Table of Contents
সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার কী ?
কোম্পানির আইন ২০১৩ এর ধারা ২(৮৮) সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারকে বর্ণনা করে । নিন্মোক্ত কারণগুলোর জন্য কোম্পানির নির্দিষ্ট কর্মচারী বা পরিচালকদের কাছে সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার দেওয়া হয় –
১) যেকোন প্রকল্পের সমাপ্তিতে একজন কর্মচারী বা পরিচালকের উল্লেখযোগ্য অবদান এবং প্রচেষ্টা ।
২) প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে দক্ষতা ।
৩) কোম্পানির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এমন প্রতিভাকে আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে কর্মীদের সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার দেওয়ার প্রবনতা থাকে । যখন একজন কর্মচারীর সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার থাকে , তখন সে কোম্পানির লাভের একটি অংশ তাদের বিনিয়গের রিটার্ন হিসাবে পেতে পারেন ।
আপনি হয়তো অল্প ধারনা পেয়েছেন সোয়েট ইক্যুইটি সম্পর্কে । চলুন আলোচনা করে নেওয়া যাক সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারের নিয়ন্ত্রন আইনগুলো নিয়ে –
সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারের অন্তর্নিহিত আইন
সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার ইস্যু করা কোম্পানি আইন , ১৯৫৬ এবং কোম্পানি আইন ২০২৩ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।যদি কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত না হয় তাহলে এনটিটি কে সেকশন ৫৪ এবং তার সাথে রুলস ২০১৪ ফলো করতে হবে । তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে সেবি রেগুলেশনের সাথে কোম্পানির অ্যাক্ট ২০১৩ মেনে চলতে হবে ।
জয়েন করুন আমাদের হোটাসঅ্যাপ গ্রুপ – https://chat.whatsapp.com/GlH6vry8ohJ4owIbweLCVc
সোয়েট ইক্যুইটি ইস্যুর পেছনে কারন
একটি সোয়েট ইক্যুইটি ইস্যু করার পেছনে প্রথম ও প্রধান কারন হল কর্মীদের আকৃষ্ট করা এবং ধরে রাখা । ইনসেন্টিভ ছাড়াও সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারগুলি তিন বছরের বাধ্যতামূলক লকইন পিরিয়ড এবং অ- হস্তান্তরযোগ্য শেয়ারগুলি ধরে রাখার কৌশলে সহায়তা করে । এছাড়াও কোম্পানির ভবিষ্যত বৃদ্ধির পথ অজানা থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরনের শেয়ার অফার করা বেশি পছন্দনীয় । এই ধরনের শেয়ারগুলি কর্মীদের ভোট দেওয়ার অধিকারের পাশাপাশি ডিভিডেন্ড পাওয়ার অধিকার পায় ।
সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারগুলি ডিসকাউন্ট মূল্যে কর্মীদের সরাসরি বরাদ্দ করা হয় । এই ধরনের শেয়ারগুলি ESOPS ( কর্মচারী স্টক অপশন প্ল্যান) থেকে অগ্রধিকার দেওয়া হয় কারন তারা কেনার অধিকার অফার করে এবং ভবিষ্যতে বরাদ্দ করা একটি পূর্ব নির্ধারিত মূল্য শেয়ার কেনার বাধ্যতামূলক নয় যার ফলে মূল্যের অস্থিরতার উপর নির্ভরশীল।
একটি নিবন্ধিত মূল্যায়নকারী মূল্যায়ন করে এবং সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারের নায্য মূল্য নির্ধারণ করে । এটি অনেক আর্থিক ব্যয় ছাড়াই একজন কর্মচারীকে লক্ষ্য কাজ করে ।
এটি একজন অসাধারন পরিচালককে পুরস্কৃত করার জন্য জারি করা যেতে পারে যিনি কোম্পানির বৃদ্ধির সময়ে বাইরে চলে যান ।এই ধরনের পরিচালকদের তাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের আগ্রহী রাখতে এবং আসন্ন ভবিষতে জন্য জড়িত থাকার জন্য সোয়েট ইক্যুইটি জারি করা যেতে পারে ।
কে সোয়েট ইক্যুইটি ইস্যু করতে পারেন ?
নিন্মলিখিত কোম্পানিগুলি সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার ইস্যু করতে পারে –
এক ব্যক্তি কোম্পানি (One person company)
সরকারি কোম্পানি ( Public company)
ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান (Private company)
সেকশন ৮ কোম্পানি (Section 8 company)
তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানি (Listed or unlisted company)
কোন কর্মচারীরা সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ?
কোম্পানি আইন, ২০১৩ এর ধারা ২(৮৮) অনুযায়ী এই স্কিমের আওতায় থাকা কর্মচারীরা হন –
পরিচালক ( Directors)
কর্মচারী (Employees)
আইন কিভাবে কর্মীদের সংজ্ঞায়িত করে ?
কোম্পানি ( শেয়ার ক্যাপিটাল অ্যান্ড ডিবেঞ্চার) বিধিমালা ,২০১৪ এর বিধি ৮(১) অনুসারে , একজন কর্মচারী কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে –
একজন ব্যাক্তি যিনি অন্তত এক বছরের জন্য ভারতে বা বাইরে থেকে কোম্পানিতে স্থায়ী পদে কাজ করেছেন।
কোম্পানির একজন পরিচালক , সার্বক্ষণিক ডিরেক্টর হোক বা না হোক অথবা
ভারতে বা বাইরে সত্তার বা সহায়ক সংস্থার উপরে সংজ্ঞায়িত একজন কর্মচারী বা পরিচালক ।
মূল্য সংযোজন কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় ?
কোম্পানি ( শেয়ার ক্যাপিটাল এবং ডিবেঞ্চার) বিধিমালা ২০১৪ বিধি ৮(১) অনুসারে “মূল্য সংযোজন” (Value addition) প্রকৃত বা প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক সুবিধা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা কর্মীদের বা পরিচালকদের দ্বারা উৎপন্ন হয় বা প্রাপ্ত হয় বা এখনি পাওয়া যায়নি কোম্পানি দ্বারা ।
একটি কোম্পানি কতগুলি সোয়েট ইক্যুটি ইস্যু করতে পারে ?
সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার ইস্যু করার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে । একটি কোম্পানিকে নিন্মলিখিত সংখ্যক শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া হয় –
এক বছরে তার বর্তমান পরিশোধিত ইক্যুইটি শেয়ার মূলধনের ১৫% টাকার সমান ৫ কোটি টাকা ।
এছাড়াও সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারগুলি ইস্যুকারী সংস্থার পরিশোধিত ইক্যুইটি মূলধনের ২৫% এর বেশি সময়ে যাওয়া উচিত নয় । যাইহোক স্টাটআপের জন্য ব্যতিক্রম আছে । যেহেতু তাঁরা নিবন্ধন বা নিগমকরনের তারিখ থেকে ৫ বছরের মধ্য পরিশোধিত মূলধনের ৫০% পর্যন্ত ইস্যু করার অনুমতি পেয়েছে ।
সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারের তাৎপর্য
আজ আমরা সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ারের তাৎপর্য এবং তাঁরা কিভাবে একটি কোম্পানি এবং কর্মচারীদের উপকার করে তা নিয়ে আলোচনা করি-
প্রাথমিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ স্টার্ট আপ তাদের কর্মীদের নগদ বা অন্য কোন উপায়ে আর্থিক পুরষ্কারে পুরস্কৃত করতে অক্ষম। তাই সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার দিয়ে পুরস্কৃত করে । এটি শুধুমাত্র স্টার্ট আপের মধ্য সীমাবদ্ধ নয় স্বীকৃত কোম্পানিগুলিও এটি করতে পারে ।
কর্মচারীদের সোয়েট এক্যুইটি শেয়ার অফার করে তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি উপায় । এই ধরনের স্বীকৃতি তাদের কোম্পানির সাথে দীর্ঘস্থায়ী হতে অনুপ্রাণিত করে ।
কোন কর্মচারীর বেতন কেটে গেলেও সোয়েট এক্যুইটি শেয়ার হারানো অর্থ পূরণ করতে পারে ।
নিন্মোক্ত শর্ত পূরণ করা হলে বরাদ্দ বা হস্তান্তর করার সময় সোয়েট ইক্যুয়টি শেয়ার কর্মচারীদের হাতে করযোগ্য-
যদি কর্মচারীকে দেওয়া শেয়ারগুলি সিকিউরিটিজ কন্ট্রাক্ট (রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ১৯৫৬ এর ধারা ২ এ সংজ্ঞায়িত করা হয় ।
যদি এই শেয়াগুলি ১লা এপ্রিল ২০০৯ এ বা তার পরে বরাদ্দ বা স্থানান্তর করা হয় ।
যদি সোয়েট ইক্যুইটি শেয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একজন কর্মচারী বা প্রাক্তন কর্মচারীকে দেওয়া হয় ।
আজকের ব্লগটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে সকলকে জানার সুযোগ করে দিন ।
আরো পড়ুন –
সবচেয়ে নিরাপদ স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা
Hi, I’m Pritam Saha. I have a passion for stocks and have spent my last 6+ years learning about the stock market. My Blog focuses on idea & concepts that improve the skills of the investor to manage their own money.
Pingback: সভেরিন গোল্ড বন্ড । Sovereign gold bond - Share Bazar Blog