আপনার শারিরীক স্বাস্থ্য জানার জন্য আপনি ল্যাবে গিয়ে আপনার সমস্ত টেস্ট করার পর আপনার স্বাস্থ্য কেমন রয়েছে তা জানতে পারবেন আবার একজন শিক্ষাথীর মেধার স্বাস্থ্য জানার জন্য তার মার্কশিট দেখতে হবে ঠিক একই রকমভাবে কোন কোম্পানির স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সেই কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন পড়তে হবে ।
বার্ষিক প্রতিবেদন সমস্ত বিনিয়োগকারীদের পড়া উচিত কারন এটা পড়েই জানা যাবে কোন কোম্পানি ভবিষ্যতে কেমন পারফরমান্স করতে পারবে ।
Table of Contents
বার্ষিক প্রতিবেদন কী ?
এটি একধরনের নথি যা প্রতি আর্থিক বছরে শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দ্যশ্যে প্রকাশ করা হয় , কোম্পানির রুলস অনুযায়ী এটি প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক ।এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোম্পানির পারফরমান্স তুলে ধরা হয় ।
বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একমাত্র নথি যার মাধ্যমে কোম্পানি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় । কোন কোম্পানির বিস্তারিত মুল্যায়ন বার্ষিক প্রতিবেদন পড়ার মাধ্যমেই শুরু হয় ।শেয়ার বাজরে সফল নিবেশক হতে চাইলে অবশ্যই তাকে বার্ষিক প্রতিবেদন পড়তে হবে তা না হলে কখনই সে সফল নিবেশক হতে পারবে না ।
বার্ষিক প্রতিবেদনের উৎস ?
একজন বিনিয়োগকারী একাধিক জায়গা থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে পারে। নীচে সমস্ত উৎস গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
১) Company website – investor section
আপনি যে কোম্পানির মুল্যায়ন করতে চাইছেন সেই কোম্পানির ওয়েবসাইটে ইনভেস্টর সেকশনে গিয়ে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন । সাধারণত কোন কোম্পানির ওয়েবসাইটে ১০-১২ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন (Annual Reports) থাকে ।এছাড়াও আপনি গুগলে গিয়ে সার্চ করতে পারেন কোম্পানির নাম লিখে , উদাহরনস্বরূপ- dabur annual report ।
কোন কোম্পানির ওয়েবসাইটে বার্ষিক প্রতিবেদন না থাকলে এটি কোন নেগেটিভ কোন জিনিস নয় , কোম্পানি লাইফ সাইকেল পরিবর্তন হলে সেটা নাও থাকতে পারে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে না পাওয়া গেলেও পাবলিক আরো উৎস রয়েছে , যেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
২) Stock exchange website
স্টক এক্সচেঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস যেখানে কোম্পানির সমস্ত গুরুত্বপূর্ণতথ্য পরিবেশন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের ওয়েবসাইটে কোম্পানি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করে থাকে । ভারতে bombay stock exchange (BSE) তে যে সমস্ত স্টক লিস্ট রয়েছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন( Annual Report) সংগ্রহ করতে পারবেন ।
৩) Financial website
বিভিন্ন ধরনের ফাইনান্সশিয়াল ওয়েবসাইটগুলো থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে পারবেন । Moneycontrol, Screener.in এই সমস্ত ওয়েবসাইটগুলোতে গিয়েও আপনি যেকোন কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন ডাউনলোড করতে পারবেন ।
৪) Paid source
উপরে ৩টি ফ্রী সোর্স সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, আপনারা সেখান থেকেই সংগ্রহ করতে পারবেন । তবে কিছু পেইড সোর্স রয়েছে যারা বার্ষিক প্রতিবেদন প্রোভাইড করে ।
Open your Demat account -
https://tinyurl.com/y6fnq69h ( একমাসের ব্রোকারেজ একদম বিনামূল্যে)
বার্ষিক প্রতিবেদনে কোন কোন বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া উচিত ?
বার্ষিক প্রতিবেদনে একটি কোম্পানির সারা বছরের প্যারফরমেন্স উল্লেখ থাকে ।আমরা বার্ষিক প্রতিবেদন পড়ি, যখন কোন কোম্পানি প্রথম আমাদের পোর্টফলিওতে যুক্ত করার পরিকল্পনা থাকে অথবা আমাদের পোর্টফলিওতে যুক্ত রয়েছে ।যখন আপনি কোন কোম্পানি প্রথম অ্যানালাইসিস করছেন তখন অবশ্যই আগের ১০ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন পড়া নেওয়া উচিত , তাহলেই কোম্পানি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা পাবেন ।
বার্ষিক প্রতিবেদনে ফাইনান্সশিয়াল এবং নন ফাইনান্সশিয়াল দুই ধরনের তথ্য থাকে কোম্পানি সম্পর্কে । একজন বিনিয়োগকারীর জন্য দুই ধরনের তথ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
Non financial information
Communication form promoters & senior management
বার্ষিক প্রতিবেদন হল বার্ষিক একটি উৎসব যার দ্বারা কোম্পানির মালিক/ ম্যানেজারদের সাথে শেয়ারহোল্ডারদের যোগাযোগের সাথে কোম্পানির লক্ষ্য , কোম্পানি কেমন পারফরমেন্স করছে এবং কোম্পানি কি কি বাঁধার সন্মুখীন হয়েছে , কিভাবে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করছে , পুরনো লক্ষ্যগুলো কতটা পূরণ হয়েছে এবং ভবিষতে কিকি প্ল্যান নেওয়া হয়েছে প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে ।
অনেক কোম্পানির প্রোমটার রয়েছে যারা সততার সাথে কোম্পানির সমস্ত ধরনের তথ্য শেয়ারহোল্ডারদের সাথে শেয়ার করে । Warren Buffet তাদের মধ্য একজন । তার Berkshare Hathway শেয়ার হোল্ডারদের উদ্দেশ্য লেখা চিঠি গোটা বিশ্বের নিবেশকরা পড়েন ।
ম্যানেজমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্য যে বার্তা দেয় যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস কোম্পানির বিচার করার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যায় ।আমাদের যখন কোন কোম্পানি সম্পর্কে কোন তথ্য নেওয়ার দরকার হয় তখন সেই কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন পড়ি ।
Director’s Report
এই সেকশনে ডাইরেক্টররা শেয়ারহোল্ডারদের জানায়, তারা গত আর্থিক বছরে কি কি করেছে ,কত নতুন কাস্টমার এসেছে, পুরনো প্রোজেক্ট শেষ করেছে কিনা এবং কোনগুলি মাঝপথেই ছেড়ে দিয়েছে ।
আমরা আনাল্যসিস করি বর্তমান আর্থিক বছরের সাথে পুরনো আর্থিক বছরের। আগের বছরে যা যা বলেছিল তা কতটা সফল হয়েছে এবং ভবিষতে কি কি পরিকল্পনা নিয়েছে । আমাদের মূল নজর দেওয়া উচিত কোম্পানি কতটা ইমপ্লিমেন্ট করতে সমর্থ থাকে ।
Management Discussion & Analysis
বার্ষিক প্রতিবেদনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল Management discussion & analysis , এটির দ্বারা কোম্পানি ব্যাবসা পরিচালিত করতে কেমন পরিবেশের সামনাসামনি হয়েছে তা শেয়ারহোল্ডারদের জানায় ।
ম্যানেজমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের জানায় ইন্ড্রাস্টি দৃষ্টিভঙ্ঘি , কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্ঘি, সুযোগ, সমস্যা এবং আপডেট করে কোম্পানির রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে ।
Details of personnel in charge of running the company:
এই সেকশনে ডাইরেক্টরদের যোগ্যতা সম্পর্কে উল্লেখ থাকে এবং কারা কোম্পানির উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকে ।যাদের বাৎসরিক বেতন ৬০ লক্ষ টাকার বেশি থাকে তাদের সমস্ত ডিটেলস এই সেকশনে উল্লেখ থাকে ।
এই সেকশনে আমরা অ্যানালাইসিস করব কোম্পানি কত টাকা বেতন দিচ্ছে , কোম্পানির লাভ কত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য কতটা রয়েছে ।
Report on corporate governance:
এই সেকশনে থাকে বোর্ড অফ ডাইরেক্টর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের বোর্ড মিটিং গুলোতে কারা কারা জয়েন করে তাদের সম্পর্কে তথ্য , পূর্বের সাধারন মিটিং, আগামীর মিটিং, ডিভিডেন্ড রেকর্ড , শেয়ার বাজার সম্পর্কে তথ্য প্রভৃতি ।
Notice of annual general meeting (AGM):
এই সেকশনে AGM মিটিং কবে হবে তা জানানো হয় ,আমরা জানতে পারি প্রোমোটার এবং ম্যানেজারদের বেতন বৃদ্ধি হলে ,ভবিষতের লোন সম্পর্কে।
Financial information:
বার্ষিক প্রতিবেদনের ফাইনান্সশিয়াল ইনফর্মেশনে পড়ার মাধ্যমে আমরা কোম্পানি সম্পর্কে একটি ধারনা পেয়ে যাই –
A) The independent auditor’s report:
The independent auditor’s report:
ফাইনান্সশিয়াল সেকশন শুরু হয় independent auditors report দিয়ে , এই সেকশনে অ্যানুয়াল রিপোর্ট সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারনা পাওয়া যায় ।এই সেকশনটি পড়লেই আপনারা সেই কোম্পানি ভবিষতে কেমন ফলাফল করবে তা জানতে পারবেন । এই সেকশনে কোম্পানির কোন ফ্রোড (Fraud), সরকারের কোন পাওনা টাকা দিয়েছে কিনা ,লেন্ডারদের পেমেন্ট সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় এই সেকশনে জানা যায় ।সুতরাং প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে এটি খুব গুরত্বের সাথে পড়া উচিত ।
Financial Statement
এটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে গঠিতঃ balance sheet, profit & loss statement and cash flow statement । financial statement বর্তমান ডেটার সাথে সাথে গত আর্থিক বছরের ডেটা দেওয়া থাকে সুতরাং আপানারা সেখানেই দুই আর্থিক বছরের ফলাফল তুলনা করে নিতে পারবেন –
Balance sheet
এই অংশে কোম্পানির ASSET এবং LIABILITIES সম্পর্কে পুরো তথ্য দেওয়া থাকে যা শেষ আর্থিক বছরের লাস্ট ডেট অনুসারে ।
profit & loss (p&l) statement
এই অংশে কত সেল হয়েছে তা উল্লেখ থাকে এবং কত খরচ হয়েছে ।মোট সেল থেকে যা খরচ হয়েছে তার পর যেটা থাকবে সেটাই কোম্পানির প্রফিট অথবা লস ।
Cash flow statement
এই সেকশনে কোম্পানি গত আর্থিক বছরে অপারেশন থেকে কত ক্যাশ এনেছে ।এই সেকশনে উল্লেখ থাকে কত ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে এবং কোন ফাইনান্সশিয়াল ইন্সটিউট থেকে কত অর্থ নিয়েছে কিংবা গত আর্থিক বছরে কত টাকা উঠেছে ।
Schedules/notes to financial statements:
ফাইনান্সশিয়াল স্টেটমেন্টের সমস্ত ডেটাগুলো এখানে ভেঙে ভেঙে দেখানো হয় । ফাইনান্সশিয়াল স্টেটমেন্টের এটি অবিছেদ্য অংশ এবং এটি যদি ফাইনান্সশিয়াল স্টেটমেন্টের সাথে দেখা হয় তাহলে আরো পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যাবে ।
Related party disclosures:
প্রত্যেক কোম্পানির সমস্ত লেনদেন প্রকাশ করা খুবই জরুরি ।
এই সেকশনে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রোমোটার এবং কোম্পানির মধ্যে কত লেনদেন হয়েছে ।
যদি আমি বার্ষিক প্রতিবেদন পড়তে ১০ মিনিট সময় দেই তাহলে কোন কোন কোন বিষয়ে নজর দেবো ?
- chairman/CEO statement এর প্রথম দুটি প্যারাগ্রাফ এবং লাস্ট দুটি প্যারাগ্রাফ পড়ব ।এটি পড়লেই ব্যাবসা কেমন চলছে তার ধারনা পাওয়া যাবে ।
- Independent Auditor বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করব ।
Financial statement এর যে যে বিষয়গুলি দেখব –
১ ) নেট প্রফিট বাডছে নাকি কমছে ।
২)সেলস বাড়ছে নাকি কমছে ।
৩) নেট ডেট (net debt) বাড়ছে নাকি কমছে ।
৪) ডিফিডেন্ড বাড়ছে নাকি কমছে ।
৫) অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো থেকে ওয়াকিং ক্যাপিটাল অ্যাডজাস্ট হবার পর সেটি পজিটিভ নাকি নেগেটিভ দেখাচ্ছে ।
বার্ষিক প্রতিবেদন এমন এক ধরনে ডকুমেন্ট যার দ্বারা একটি কোম্পানির হাঁড়ির খবর সংগ্রহ করা যায়। কোম্পানির ভবিষত কেমন সম্ভনাময় রয়েছে , ম্যানেজমেন্ট চরিত্র প্রভৃতি সম্পর্কে ধারনা দিয়ে থাকে ।বার্ষিক প্রতিবেদন এমন একটি নথি যা প্রত্যক বিনিয়গকারীদের অবশ্যই পড়া উচিত ।
১) বার্ষিক প্রতিবেদনে কোন কোন বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত?
উত্তরঃ Initial page, Chairman letter, Boards report, shareholding report, report on governance,management discussion & analysis, consolidated financial statement ।
২) বার্ষিক প্রতিবেদন পড়তে কত সময় লাগে ?
উত্তরঃ এটি নির্ভর করে বার্ষিক প্রতিবেদনের পৃষ্ঠার উপর । সাধারণত বার্ষিক প্রতিবেদন ১৭০-২৫০ পৃষ্ঠার মধ্য হয়ে থাকে ,তাহলে ২-৪ ঘণ্টার মত সময় লাগবে ।
৩) বার্ষিক প্রতিবেদনের উৎস কোথায় ?
উত্তরঃ সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উৎস হল কোম্পানির ওয়েবসাইট ।
আরো পড়ুন –
Personal Finance কি এবং কেন জরুরি।ব্যক্তিগত অর্থায়ন সহজ ভাবে পরিচালনার 5 টি সহজ উপায়
কীভাবে শেয়ার ব্যাবসায় লাভবান হবেন ? আমার মতে সেরা 30টি বিনিয়োগ পরামর্শ ।
Angel One অ্যাপের সাহায্য বিনামূল্যে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলুন, পাবেন ছাড়
রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড :রবার্ট টি কিয়োসাকি
Hi, I’m Pritam Saha. I have a passion for stocks and have spent my last 6+ years learning about the stock market. My Blog focuses on idea & concepts that improve the skills of the investor to manage their own money.
Pingback: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ পদ্ধতি।Final checklist before Investing in a stock - Share Bazar Blog
Pingback: Berkshire Hathaway।বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে - Share Bazar Blog
Pingback: মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চাইছেন । এই 10 টি ভুল সম্পর্কে এক্ষনি সচেতন হওয়া জরুরী - Share Bazar Blog
Pingback: শেয়ার বাজারে টাকা হারানো লোকের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ। কিন্তু কেন? - Share Bazar Blog
খুব সুন্দর ও সহজ ভাবে বোঝানো হয়েছে। খুব উপকৃত হলাম । থ্যাঙ্ক ইউ share bazar blog। Thank you pritam sir।
Pingback: ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস কি । বেসিক অফ ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস - Share Bazar Blog