মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিষয়টি ক্রমশই আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যে সব বিনিয়োগকারী আগে পিপিএফ বা ফিক্সড ডিপোজিটের মত ঐতিহ্যবাহী সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারতেন না, তারাও এখন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাজারগত ঝুঁকি বা নিরাপত্তার ব্যাপারে আপনার যদি যথাযথ জ্ঞান না থেকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সরাসরি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ না করে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেক বেশি নিরাপদ। মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত লক্ষ্য পুরণের জন্য এই মিউচুয়াল ফান্ড একটি চমৎকার উপায়। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য যে আপনাকে হাজার হাজার টাকা দিয়ে শুরু করতে হবে তেমন নয়, ন্যুনতম ৫০০ টাকা প্রতিমাসে বিনিয়োগ করেও আপনি শুরু করতে পারেন।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো এমন কতকগুলি ভুল নিয়ে যেগুলি সম্পর্কে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে আপনার জানা প্রয়োজন।
Table of Contents
বিনিয়োগের আগে সঠিকভাবে রিসার্চ না করা
আপনি যদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন তাহলে বিনিয়োগের পূর্বে যথাযথ রিসার্চ করা একটি আবশ্যিক কাজ। বিনিয়োগ করার আগে বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং রিটার্ন সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারনা থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় বিনিয়োগ করবেন না। সময় নিন। মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা তৈরি করে তারপর বিনিয়োগ করুন।
আপনার আর্থিক লক্ষ্য সুস্পষ্ট করুন
সুস্পষ্ট লক্ষ্য স্থির না করে আর্থিক বিনিয়োগ করলে তা আপনাকে বিভ্রান্ত করবে এবং কাঙ্খিত রিটার্ন থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। ধরুন আপনি একটি গাড়ি কিনতে চাইছেন বলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন সেক্ষেত্রে আপনার বিনিয়োগের পন্থা যেমন হবে, আপনার রিটায়ারমেন্ট জন্য করা বিনিয়োগ তার থেকে নিশ্চয়ই আলাদা। স্বল্পমেয়াদী হোক বা দীর্ঘমেয়াদী, বিনিয়োগের আগে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ অবশ্যই করতে হবে।
বিনিয়োগের জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন ?
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে আপনি এখনও বিনিয়োগ শুরুই করে উঠতে পারছেন না? তাহলে বলবো আসলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কোন সঠিক বা উপযুক্ত সময় হয় না। বাজার যে কোন সময়েই উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে তবে তা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বাজার সম্পর্কে ভাবনা আসে সেই সময় যখন আপনি বিনিয়োগ না করে ট্রেডিং করার কথা ভাববেন।
সবটাই বিনিয়োগ না করে জরুরী অবস্থার জন্য কিছু গচ্ছিত রাখুন
অনেকেই তাদের আয় থেকে সঞ্চয় করা অর্থের পুরোটাই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে ফেলেন। ফলে কোন জরুরী অবস্থার মুখোমুখি হলে সেখানে ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ হাতে থাকে না এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। ফলে এই অর্থের প্রয়োজন মেটাতে সময়ের পূর্বেই ইউনিট গুলিকে রিডিম করার জন্য এক্সিট লোড পরিশোধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
বিনিয়োগে সামঞ্জস্যের অভাব
অনেক বিনিয়োগকারী আছেন যারা সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেন না। আপনার আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন আপনার জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয় ঠিক তেমনই আপনার আয় বাড়লে বিনিয়োগের পরিমাণেরও পরিবর্তন করতে হবে। এসআইপি (SIP) যদি দীর্ঘমেয়াদি একই রকম থেকে যায় তাহলে তা কাঙ্খিত রিটার্ন দেয় না। এছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়তে থাকে, এই কারণেও এসআইপি (SIP) বাড়ানো প্রয়োজন।
আপনার মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফলিওকে যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় করে তুলুন
প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ড নিজস্ব বৈচিত্র্য ধারন করে থাকে। একজন দক্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইলে বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ করুন। হতে পারে আপনি বিনিয়োগের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডের একটি নির্দিষ্ট ধরন বেঁছে নিয়েছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে একটিমাত্র স্কিমে বিনিয়োগ না করে দুটি তিনটি বা তার বেশি স্কিমে বিনিয়োগ করুন।
নির্দিষ্ট সময় অন্তর মিউচুয়াল ফান্ড পর্যবেক্ষণ করুন
নিয়মিত বিনিয়োগ করেন এমন অনেকেই রয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম লোক খুঁজে পাবেন যারা কিনা নিয়ম মাফিক তাদের বিনিয়োগ ট্র্যাক করে থাকেন। রুটিন করে আপনার বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণ করুন। অন্যথায় আপনার আর্থিক লক্ষ্যগুলি পূরণের থেকে দূরেই থেকে যাবেন। কেননা পর্যায়ক্রমিক ট্র্যাকিংএর অভাবে ফান্ড থেকে কাঙ্খিত রিটার্ন লাভে আপনি ব্যর্থ হবেন।
সুনিশ্চিত রিটার্নের কথা ভেবে বিনিয়োগ করছেন ?
যে কোন বিনিয়োগকেই বেঁছে নেই না কেন আমরা প্রত্যেকেই চাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর যেন একটা সুনিশ্চিত রিটার্ন পেতে পারি। যে কোন কোম্পানিই আপনাকে এই সতর্ক বার্তা দিয়ে থাকে যে মিউচুয়াল ফান্ড কিন্ত বাজারগত ঝুঁকি সাপেক্ষ।। এর অর্থ হল মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্ন বাজারের ওঠানামার দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
সময়ের আগে রিডিম করা
বাজারের অস্থিরতা দেখে অনেক সময় নতুন বা অপটু বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে যান এবং অন্যদের অনুসরণ করে সময়ের আগেই এসআইপি (SIP) বন্ধ করে রিডিম করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। মনে রাখবেন সেই বিনিয়োগকারীরাই বাজার থেকে বেশি পুরস্কৃত হয়েছেন, যারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আজই আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ওপেন করুন বিনামূল্যে – https://angel-one.onelink.me/Wjgr/hj24vhhe
আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ না নিয়ে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন
আর্থিক উপদেষ্টার সজ্ঞে পরামর্শের বিষয়টিকে অনেকেই একটি অপ্রয়োজনীয় খরচের আওতায় ফেলে দেন। তারা মনে করে থাকেন বিনিয়োগ করার জন্য কোন আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ না হলেও চলে। এক্ষেত্রে তারা বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা আত্মীয়দের থেকে টিপস নিতেই বেশি আগ্রহ বোধ করেন। কিন্তু মনে রাখবেন বিনিয়োগ কোন এককালীন প্রক্রিয়া নয়, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিটি পর্যায় পরিবর্তিত হতে থাকে। একজন আর্থিক উপদেষ্টা আপনাকে শুধুমাত্র সঠিক সম্পদ বিনিয়োগের পরামর্শই দেন না বরং বাজারগত ঝুঁকি এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ রিটার্নের ব্যাপারে ধারনা পেতেও সাহায্য করে থাকেন। তাই বিনিয়োগের আগে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নিন।
আজকের অ্যাটিক্যালটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার আপনজনের সাথে অবশ্যই শেয়ার করূন । বিনিয়োগ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানান।
আরো পড়ুন 👇👇
ফ্লেক্সি মিউচুয়াল ফান্ড কিভাবে রিটার্ন বৃদ্ধি করে ?
গৃহবধূদের বিনিয়োগের ৫ টি দুর্দান্ত আইডিয়া
শেয়ার বাজারে বাইবেল সম্পর্কে জানুন
Hi, I’m Pritam Saha. I have a passion for stocks and have spent my last 6+ years learning about the stock market. My Blog focuses on idea & concepts that improve the skills of the investor to manage their own money.