You are currently viewing ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ভারতের! প্রথমবার ডিজিটাল মুদ্রা ‘e₹’ আনতে চলেছে RBI   

ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ভারতের! প্রথমবার ডিজিটাল মুদ্রা ‘e₹’ আনতে চলেছে RBI   

  

Digital Rupee e : প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা ই-রুপি পেতে চলেছে ভারত। ভারতীয় অর্থনীতিকে আরো একধাপ এগিয়ে দিয়ে ১লা নভেম্বর মঙ্গলবার ই-রুপি চালু করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ভারতীয় মুদ্রারই ডিজিটাল সংস্করণ এই ই-রুপি। এই ডিজিটাল মুদ্রার ফলে ভারতীয় অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে দাবী করা হয়েছে। তবে কি পকেটে টাকা রাখার দিন ফুরোতে চলেছে? 

আপাতত একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবেই ডিজিটাল মুদ্রা আনা হচ্ছে। সরকারি যে সব সিকিউরিটি রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রেই এখন ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। 

ই-রুপির নামকরণ

ই-রুপির নামকরণ করা হয়েছে CBDC বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি। এই ডিজিটাল মুদ্রা আসলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ছাপানো নোটের ডিজিটাল সংস্করণ মাত্র। তফাৎ এটুকুই যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক্ষেত্রে টাকা ছাপানোর পরিবর্তে ইলেকট্রনিক টোকেন ইস্যু করবে। ডিজিটাল মুদ্রার মূল্য ভারতীয় টাকার মূল্যের সমানই থাকবে। এক্ষেত্রে কোন পার্থক্য থাকবে না। এক্ষেত্রে ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেসের দ্বারা রিয়েল টাইমে টাকা লেনদেন করা যাবে। এমনটাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের থেকে দাবী করা হয়েছে। 

সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি আসলে কি?

সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি তেমন কোন জটিল ব্যাপার নয়। আপনার পকেটে যে পেপার নোট থাকে তার সঙ্গে ডিজিটাল কারেন্সির পার্থক্য এটাই যে ই-রুপি ডিজিটাল মাধ্যমে থাকে। অর্থাৎ এটিও ক্রিপ্টোকারেন্সির মত ভার্চুয়াল মাধ্যমে লেনদেন করার উপায়। এই টাকা আপনার মানি ব্যাগের পরিবর্তে ডিজিটাল ওয়ালেটে থাকবে। আর এই সমস্ত বিষয়টির তদারকি করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। 

দু-ধরনের CBDC রয়েছে। একটি CBDC-W (হোলসেল), CBDC-R (রিটেল)। CBDC-W পাইকারি বাজারে লেনদেনের জন্য। নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার লেনদেনের জন্য এটির ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখা হবে। অন্যদিকে CBDC-R খুচরো লেনদেনের জন্য। এটিই সাধারণ মানুষের পেমেন্টের জন্য ই-রুপি। 

ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে এই ই-রুপির পার্থক্য কি?

ক্রিপ্টোকারেন্সি কথাটির সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। বিটকয়েনের মত ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার তো অনেকে করেও থাকেন। তবে কি এই ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ই-রুপি একই ? না, ডিজিটাল কারেন্সির সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির তফাৎ রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি কর্পোরেট বা বেসরকারি সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে ই-রুপি বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি ভারতীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত ডিজিটাল মুদ্রা। 

ক্রিপ্টোকারেন্সির মত মুদ্রায় যথেষ্ট ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে বলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

কিভাবে ই-রুপির মাধ্যমে লেনদেন করবেন?

মোবাইল ফোনে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের মাধমে অন্যান্য লেনদেন যেমন করে থাকেন, ই-রুপির ক্ষেত্রেও সেই একই মেকানিজমে টাকার লেনদেন করা যাবে। ব্যবহারকারী নিজের মোবাইল ফোনে QR কোডের মাধ্যমেও পেমেন্ট করতে পারবেন। গ্রাহকের গোপনিয়তার কথা মাথায় রেখে বিশেষ ভাবে এই লেনদেনের মাধ্যম তৈরি করা হয়েছে, যা কিনা সহজ এবং দ্রুত একটি পেমেন্টের মাধ্যম। 

ই-রুপি ব্যবহারের সুবিধা কি কি?

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃক জানানো হয়েছে যে ডিজিটাল মুদ্রা ই-রুপি চালু হওয়ার পর আর্থিক লেনদেন আরো বেশি সহজ হবে। ইণ্টারনেট পরিষেবা ছাড়াই আপনি ই-রুপির মাধমে টাকা লেনদেন করতে পারেন, সেটিও মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এছাড়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট বা চেকের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রেও কোন রকম অসুবিধা থাকবে না।

ই-রুপি ব্যবহারের জন্য কেবলমাত্র আপনার মোবাইল নম্বরই যথেষ্ট। এর জন্য আলাদা করে আধার নম্বর বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট নম্বরের প্রয়োজন নেই। 

পেপার নোটের ক্ষেত্রে একটি বড় আশঙ্কার জায়গা জাল নোট। ই-রুপি চালু হলে এই জাল নোটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

টাকা ছিঁড়ে গিয়ে, জলে ভিজে গিয়ে অথবা পুরানো নোট অনেক বেশি দিন ব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়ে গেলে তা আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। ই-রুপি ব্যবহার শুরু হলে এই সমস্যা থেকে অনেকখানি মুক্তি মিলতে পারে।

পেপার নোট তৈরি করতে যে বিশাল পরিমানে বৃক্ষছেদন করতে হয়, ই-রুপির ব্যবহার বাড়লে আর এত বেশি গাছ কাটার প্রয়োজন হবে না। ফলে এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ হতে চলেছে। 

ডিজিটাল কারেন্সিইর কিছু অসুবিধাও কিন্তু রয়েছে

ব্যাঙ্কে রাখা আপনার টাকা যে কোন সময়ে আপনি ডিজিটাল কারেন্সিতে রুপান্তরিত করে নিতে পারেন। তাহলে অসুবিধা কোথায়?

ব্যাঙ্কে আপনি টাকা রাখেন আপনার সম্পদের সুরক্ষার জন্য। যখন গ্রাহকেরা জানতে পারবে যে ডিজিটাল মুদ্রাও তাদের একই রকম সুরক্ষা দিতে সক্ষম তখন বহু অ্যাকাউণ্ট হোল্ডারই তাদের টাকা ডিজিটাল ফর্মে রুপান্তরিত করে নিতে পারেন। তাহলে ভেবে দেখুন এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কের কাছে নগদ অর্থের যোগান যথেষ্টই কম হয়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কের কাছে যদি পর্যাপ্ত নগদ অর্থের যোগান না থাকে তাহলে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসবে।

এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি এমন কোন নিয়ম লাগু করতে পারে যেখানে কোন অ্যাকাউণ্ট হোল্ডার তার অর্থের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাঙ্কে রেখে তবেই বাকিটা ই-রুপিতে রুপান্তরিত করতে পারে, তাহলে হয়তো সমস্যার সমাধান অনেকখানি সম্ভব। 

ইলেকট্রনিক মাধ্যমে টাকা লেনদেনের প্রসঙ্গ আসলে অনেকেই এখনও আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন। এক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ব্যবহারকারীদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, লেনদেনের ব্যাপারে সুরক্ষা নিয়ে কোন সংশয়ই এখানে নেই। কেননা এটি একটি সার্বভৌম মুদ্রা। অপরদিকে এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যেহেতু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে তাই সুরক্ষা নিয়ে গ্রাহকেরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

সুত্রঃ RBI

আরো পড়ুন-

ক্রিপ্টোকারেন্সি কী ?

 ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কিভাবে বিনিয়োগ করবেন ?

স্টক কেনার আগে কোন কোন বিষয়ের উপর নজর দিবেন ?

যে ১০টি বই সকল সফল বিনিয়োগকারীরা পড়েন ।

This Post Has 2 Comments

Leave a Reply