You are currently viewing কনজারভেটিভ ইনভেস্টর স্লিপ ওয়েল-ফিলিপ ফিশার।Conservative Investors Sleep Well by Philip A. Fisher

কনজারভেটিভ ইনভেস্টর স্লিপ ওয়েল-ফিলিপ ফিশার।Conservative Investors Sleep Well by Philip A. Fisher

কিংবদন্তি ইনভেস্টরদের মধ্যে অন্যতম একটি নাম ফিলিপ ফিশার। তার লেখা বিখ্যাত বই কনজারভেটিভ ইনভেস্টর স্লিপ ওয়েল। ফিশারের দর্শন অনুযায়ী অল্প সংখ্যক কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ভালো ফল দিতে পারে। তবে কোম্পানি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে। যে কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম, সেখানে বিনিয়োগ করার কথা এখানে তিনি বলেছেন। সঠিক কোম্পানি খোঁজার জন্য আরো ভালো গাইডেন্স পাবেন লেখকের আরেকটি বেস্ট সেলার বইতে। “কমন স্টকস এন্ড আনকমন প্রফিট” । ইনভেস্টররা যাতে সঠিক কোম্পানি খুঁজে পেতে পারেন সেজন্য তিনি এখানে পনেরটি গাইডলাইনের উল্লেখ করেছেন যেগুলোর ওয়ারেন বাফেট বা পিটার লিঞ্চের দর্শনের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।

এই বইতে ফিশার কনজারভেটিভ  বিনিয়োগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পাঠকের উদ্দেশ্য লিখেছেন। ” কনজারভেটিভ ইনভেস্টমেন্ট”  বলতে তিনি বুঝিয়েছেন ” ন্যূনতম ঝুঁকিতে ক্রয় ক্ষমতা বজায় রাখা”। এই ধরনের বিনিয়োগকে ফিশার তিনটি ডাইমেনশনে ভাগ করেছেন।

1. মার্কেটিং

2. ব্যক্তি

3. স্বতন্ত্রতা

4. ভ্যালু বা মূল্য

এই পোষ্টে আমরা ফিসারের বই থেকে নেওয়া এই বিশেষ ধারণাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

1. মার্কেটিং

ফিশারের প্রথম ডাইমেনশন মার্কেটিং এর ব্যাপারে। এটি কোন কোম্পানির গবেষণা, উৎপাদন আর্থিক দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত। ফিশারের মতে কোনো কোম্পানির উৎপাদন দক্ষতা তাদের গ্রস মার্জিন দেখে বিচার করা যেতে পারে। যে কোম্পানি তার প্রতিযোগী অন্য কোম্পানির তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করে থাকে, ফিশার সেই সমস্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর পেছনে ফিশারের দেখানো যুক্তি এইরকম যে- কম খরচের উৎপাদক হওয়ার কারণে এই ধরনের কোম্পানিগুলি বাজারের মন্দা থেকে নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম।

মার্কেটিং এর ব্যাপারে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফিশারের লেখনীতে উঠে এসেছে। নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণায় বিনিয়োগ করে এমন কোম্পানি খুঁজে বের করার পরামর্শ ফিশার তার পাঠকদের দিয়েছেন। নতুন প্রযুক্তি মানেই আরো ভালো পণ্য। এই রিসার্চ টিম আবার বর্তমান বাজারের চাহিদা সম্পর্কে জানতে  মার্কেটিং টিমের সাহায্য নিয়ে থাকে।

ফিশার বলেছেন ফিনান্সিয়াল স্কিলও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কতখানি দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি পণ্য উৎপাদন হয় তা কোম্পানির জানা প্রয়োজন। যদি তা না হয় তাহলে কোম্পানি অনুধাবন করতে পারবে না ঠিক কোন জায়গায় ফোকাস করলে তারা সর্বোচ্চ মুনাফা লাভে সক্ষম হবে।

আরো পড়ুন – শেয়ার বাজারের সহজ পাঠ

2. পিপল বা ব্যক্তি

কনজারভেটিভ ইনভেস্টমেন্ট বা রক্ষণশীল বিনিয়োগের পরবর্তী ডাইমেনশনটিকে ফিশার পিপল ফ্যাক্টর বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে তিনি এমন ব্যক্তির কথা বলতে চেয়েছেন কাজের ক্ষেত্রে যিনি প্রধান এবং যিনি অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তিদের একটি দল নিয়ে কাজ করে থাকেন। ফিশার আরো বলেন, দায়িত্বে থাকা এই ব্যক্তি কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদী উন্নতির কথা মাথায় রেখে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

কাজের পরিবেশ সম্পর্কে ফিশারের একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মন্তব্য এখানে আপনারা দেখতে পাবেন। এমন একটি কাজের পরিবেশ বজায় রাখার উপর তিনি জোর দিয়েছেন যেখানে সমস্ত স্তরের কর্মচারীদের যেন মনে হয় কাজ করার জন্য এটি একটি সর্বোত্তম জায়গা। কাজের জায়গায় যে সমস্ত কর্মচারী আনন্দের সঙ্গে কাজ করেন তাদের প্রোডাক্টিভিটি অনেক বেশি। কাজের পরিবেশ যদি ভালো না হয় এর ঠিক উল্টো চিত্র সেখানে আপনি দেখতে পাবেন।

3. ইউনিকনেস বা স্বতন্ত্র

কোম্পানির এমন কোন কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে যা অন্যান্য কোম্পানির কাছে অমিল। কোম্পানির এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে লেখক তৃতীয় ডাইমেনশনে ব্যাখ্যা করেছেন।

কোম্পানির এমন কিছু ব্যবসার উপর এখানে ফোকাস করতে বলা হয়েছে যা শুধুমাত্র বর্তমানে নয় বরং ভবিষ্যতেও গড় মুনাফার তুলনায় বেশি লাভের দিকটি সুনিশ্চিত করে। কোম্পানির মার্জিন পর্যালোচনা করে এই ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে উচ্চ লাভের মার্জিন থাকলে তা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধির জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তাতে সহায়তা করে।

ব্যবসা বাড়িয়ে তোলার জন্য কোম্পানিকে তার মুনাফা থেকে কিছু অংশ রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট, নতুন পণ্যের মার্কেটিং এবং অন্যান্য অপারেটিং খরচ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যবসার ক্ষেত্রে কোম্পানিরও কম বেশি ভুল- ভ্রান্তি হতে পারে। কিন্তু কোম্পানিকে তার সাফল্য ও ব্যর্থতা উভয়ের থেকেই শিখতে হবে এবং মার্কেটে টিকে থাকতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আরো পড়ুন –পিটার লিঞ্চঃ লার্ন টু আর্ন

4. ভ্যালুয়েশন বা মূল্যায়ন

ফিসারের বইয়ে সর্বশেষ যে ডাইমেনশনটির কথা আপনি জানতে পারবেন তা হল ভ্যালুয়েশন বা মূল্যায়ন।

 যে কোম্পানিগুলিতে ফিশার আগ্রহী, তাদের জন্য “মূল্যায়ন” সবচেয়ে সহজে পরিমাপগত, কোম্পানির আয় বৃদ্ধি থেকে এবং দ্বিতীয়ত, স্টকের P/E অনুপাত বৃদ্ধি থেকে।  ফিশার প্রস্তাব করেন যে শেষ উৎসটি প্রায়শই একটি স্টকের মূল্য বৃদ্ধিতে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করতে পারে।

 বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ঝুঁকির সুযোগ বিদ্যমান থাকে যখন একটি কোম্পানি প্রথম তিনটি মাত্রার ক্ষেত্রে উচ্চ পরিমাপ করে, কিন্তু মৌলিক ওয়ারেন্টের তুলনায় কম P/E থাকে।  পরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ, যদিও এখনও বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত, সেই কোম্পানিগুলি যেগুলি আবার প্রথম তিনটি মাত্রায় উচ্চ রেট দেয় এবং এই মৌলিক বিষয়গুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি P/E আছে৷  যদি একটি কোম্পানির প্রথম তিনটি মাত্রার পছন্দসই গুণাবলী থাকে, তবে তা সত্ত্বেও স্টকটি মূল্য প্রশংসনীও হবে।

আপনিও যদি নিজেকে একজন সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখতে চান তাহলে ফিসারের এই বই্টি আপনার জন্য ভালো গাইডেন্স হিসেবে কাজ করতে পারে। আর যদি চান আপনি একজন তুখোড় বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবেন তাহলে কষ্ট করে বইটি একবার পড়ে ফেলতে হবে।

আজকের অ্যাটিক্যালটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিজনদের সাথে লেখাটি শেয়ার করবেন এবং আজকের অ্যাটিক্যাল সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন ।

আরো পড়ুন –

দ্য লিটল বুক দ্যাট বিটস দ্য মার্কেট : জোয়েল গ্রিনব্ল্যাট

দ্য সাইকোলজি অফ মানি : মরগান হাউসেল

দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর: বেঞ্জামিন গ্রাহাম

দ্য রিচেস্ট ম্যান ইন ব্যাবিলন : জর্জ এস ক্ল্যাসন

Leave a Reply